ট্রোল

সপ্তর্ষি নাগ

স্যার তিনটে গল্প বাছা হয়েছে। দুটো কোরিয়ান আর একটা লেবানিস। পুরো টাইট গল্প। কিন্তু বেশি লোকে দেখেনি। আপনি যেটা বাছবেন।

সিনোপসিস রেখে যা, পাত্রে স্কচ ঢালতে ঢালতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে বললেন নামজাদা ফিল্ম ডিরেক্টর অভিনব রায়।

স্যার, আজকে দুপুর থেকেই?

আরে সেলেব্রেশন রে, সেলেব্রেশন। চলচ্চিত্র জগতের চালচিত্র বদলানোর সেলেব্রেশন। আর তার স্রষ্টা কে? এ শর্মা! আচ্ছা স্ক্রিপ্ট লেখার সময় নিজে দেখ কোথায় কোথায় পাঞ্চ মারা যায়। আইটেম সং আজকাল পাবলিক খাচ্ছে না। প্রবীরকে বল স্ক্রিপ্টে যেভাবে হোক নেপোটিজম আর একটু ইয়ের সুড়সুড়ি দিতে। লাস্টে আদর্শবাদী মনোলগ থাকে যেন। ডোন্ট ফরগেট, আই এম দি সেভিওর অফ দি ইন্ডাস্ট্রি ইন ইটস ডার্কেস্ট আওয়ার্স।

স্যার, সাইকো থ্রিলারে এসব ঢোকাবেন কি করে? কোরিয়ান সিনেমাতে বেশি ডায়ালগের জায়গা থাকে না তো। লেবানিসটাতে অবশ্য একটু সুড়সুড়ির ফাঁক আছে।

আরে অ্যাঙ্গেল আর ইমোশন বোঝ। মানুষ কি খায় সেটা বোঝ। তেমন হলে আরো গল্প বের কর। হলিউড না কিন্তু, পাবলিক চালাক আছে। ধরে ফেলবে। সব আনতে হবে থ্রিলারের প্যাকেজ করে। পেরু, আর্জেন্টিনা,নিউজিল্যান্ড এদের থ্রিলার ও তো ভালো আর এদেশের লোক তেমন জানে না সেগুলো নিয়ে।

সে আর বলতে স্যার। আর উপরওয়ালা তো আছেই আপনার সঙ্গে।

সে ঠিক আছে। আচ্ছা আগের ছবিতে আই এম ডি বি রেটিং কমছে কেন? দশ দিয়ে শুরু হয়েছিল, কাল দেখলাম আটে নেমে গেছে।

স্যার, ওদের কিসব মেট্রিক্স আছে তাতে নাকি ধরে ফেলছে যে প্রচুর ফেক একাউন্ট রেটিং পড়েছে। তাতে কি স্যার, লক্ষী তো ঢুকেছে।

লক্ষীর কথাতে মনে পড়লো, ওই সিরিয়ালের মেয়েটাকে দিয়ে কয়েকটা প্রেস কনফারেন্স করা। বলা যে নেপোটিজম গ্যাংয়ের কাস্টিং কাউচের চক্রান্তে যখন ওর সিনেমাতে কোনো কাজ জুটছিল না অভিনব রায় ওকে ব্রেক দিল পরের ছবির জন্য। আর কাল আমার বাগানবাড়িতে যেন – গ্লাসে বরফ ঢালতে ঢালতে চোখ টিপলেন ডিরেক্টর।

একদম স্যার।

স্যার, ওয়ার রুমে একবার ভিসিট হলে ভালো হত। ছেলেমেয়েগুলো ট্রোলকে শিল্পে নিয়ে গেছে।

দেখিস, খালি রিটুইট করলে হবে না কিন্তু। আর টিভি চ্যানেলের হ্যাশট্যাগ ফলো করতে বল। ওই শর্মা আর মালিক গ্যাং এবার শেষ করবো। এত কষ্ট করে মালিকের ছেলেকে ফাঁসালাম। সালা বেরিয়ে গেল।

ঠিক স্যার। আর স্যার ম্যাডাম আর গুড্ডি দুবাই থেকে কবে ফিরছে?

কিছুদিন থাকুক আরো। গুড্ডিকে বল ও যেন মাঝে মাঝেই স্টেটাস দিতে থাকে। বাবা ওকে ফিল্মে ব্রেক দেয়নি এটা যেন বোঝে পাবলিক। তারপর তোর ব্রেক ডিরেক্টর হয়ে।

আর তখন আমি আর আপনি একটু কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করব – একগাল হেসে মন্তব্য অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রিক্তার। অভিনবের হাত তখন রিক্তার শরীরে।

ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। রাত তখন এগারোটা। দুপুরের ঘোর কাটাতে আবার গ্লাসে স্কচ ঢালছেন অভিনব। বেয়ারা জানান দিল, একটা মেয়ে এসেছে। বলছে ওয়ার রুমের স্টাফ।

হাতের ইশারায় ওকে গার্ডেন রুমে পাঠাতে বললেন অভিনব। ওয়ার রুমের স্টাফদের সঙ্গে সরাসরি তার যোগাযোগ থাকে না। সত্যি বলতে কি তেমন কাউকে চেনেও না ও। রিক্তা এই বিষয়টা দেখে।এই ওয়ার রুম আজকাল ঠিক করে সিনেমার ভবিষ্যৎ। কাল আবার শুক্রবার। জুনিয়র শর্মার রিলিজ আছে। আজ সারারাত চলবে অ্যাকশন। উইকেন্ডই শর্মা ডান এন্ড ডাস্টেড হবে। সিনেমা না দেখেই মানুষ জানবে সিনেমাটা দেশ বয়কট করেছে। আর বাড়বে অভিনবের পরের ছবির প্রচার। আবেগের চেয়ে বড় ক্যাপিটাল আর আছে নাকি?

খানিক টলতে টলতেই গার্ডেন রুমে ঢুকলেন অভিনব। বছর কুড়ির একটা মেয়ে। বেশ টানটান চেহারা। পরে একে কাছে টানতে হবে। ভালো সময় কাটবে, ভাবলো অভিনব।

স্যার, সুদর্শন মিশ্রকে নিয়ে একটু কথা ছিল।

সুদর্শন তো এখন দেবদর্শন করছে।

হাঁ, স্যার। আমাদের ওয়ার রুমের মিশন সুদর্শনের দুবছর হল।

হি ওয়াস এ স্কাউন্ড্রেল। ডিজার্ভড টু ডাই। তোমরা খুব ভালো কাজ করেছিলে। লাগাতার দুমাস ওকে ট্রেন্ড করিয়েছিলে।

হাঁ স্যার। ওর স্বপ্নের ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। প্রচুর ফেক পোস্টার বানানো হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি সারাদিন ওর জীবনযাত্রা, ওর রাজনৈতিক চিন্তাকে ছিঁড়ে খেয়েছিল। সারা ভারত ওকে ট্রোল করেছিল।

এন্ড হি চোস দি ইসিয়েস্ট অপসন। সুইসাইড।

রাইট স্যার।

তা ওকে নিয়ে আবার কি হল?

স্যার, ওর মেয়ে একটু সমস্যা করছে।

কি সমস্যা?

মানে আপনার কিছু ইন্টিমেট ছবি পাঠিয়েছে ওয়ার রুমের মেইলে। এই প্যাকেটে প্রিন্টআউট আছে স্যার।

প্যাকেট খুলে শিউরে উঠলেন অভিনব। রিক্তা, বনলতা, ফারহা ইদানিংকালের প্রায় সবার সঙ্গে ওর বাগানবাড়ির একান্ত মুহূর্তের ছবি।

এগুলো মরফড ছবি। পাত্তা দিতে হবে না।

মনে মনে অভিনব ভাবছিল, আজ রাতেই সুপারি এজেন্টদের লাগাতে হবে। গায়েব করতে হবে মেয়েটাকে।

রাইট স্যার।

মেয়েটার ছবি দেখি।

বছর কুড়ির মেয়েটা একটা ছবি বের করল। সুদর্শন আর তার মেয়ের ছবি।

চমকে গেলেন অভিনব। ওয়ার রুমের মেয়েটা হাসছে। ছবিতে তো তাকেই দেখা যাচ্ছে সুদর্শনের পাশে। বছর দুয়েক আগের ছবি। মাত্র সাতচল্লিশ বছরে সুদর্শনের আত্মহত্যার আগে তার শেষ ছবি।

একটা গুলির সাইলেন্সার চাপা শব্দ। পড়ে রইল অভিনবের নিথর দেহ। আর ছিটিয়ে থাকলো সব একান্ত মুহূর্তের ছবিগুলো।

হি ডিজার্ভড টু ডাই।

News Reporter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *