কলমে – পারিজাত সাহা
আমরা আজ কাল সবাই কমবেশি ফুটবল দেখি বা খেলি । ফুটবল বাঙালি র রক্তে আছে নাকি।কিন্তু আমরা এই ফুটবল এ পা দেওয়া বা ফুটবল খেলাটি প্রথম কে ভারত এ শুরু করে ছিলেন সেটা হয়তো কম বেশি অনেকই জানেন না। এই প্রজন্ম হয়তো এটা নিয়ে অবগত নয় কিন্তু তারা মেসি , রোনাল্ডো , নেইমার ইত্যাদি প্রতিভাদের নিয়ে সারাবছর মাতামাতি করে থাকে।
বাঙালি , বাঙালি কে হয়তো ভুলে যায় বা যোগ্য সন্মান দিতে আমরা হয়তো পারিনা আজ সেই রকম এক বাঙালি যিনি এই ভারত এ প্রথম ফুটবল খেলার প্রচলন করেন, যাকে আমরা ভারত এর ফুটবল এর জনক হিসাবে জেনে থাকি তিনি হলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।
নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী , এমন একটি ব্যক্তিত্ব যে ব্রিটিশ সরকারের সময়ে চোখ এ চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখেন, তাদের কে বুঝিয়ে দেন যে বাঙালি চাইলে সব পারে, তিনি আরো বুঝিয়ে দেন ব্রিটিশ বা জমিদারি শাসন কে , মানুষ এর পরিচয় মানুষ , ধর্ম , জাত এইসব এর উপরে মানুষ সত্য।
নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী , জন্ম ২৭সে আগেস্ট ১৮৬৯ সালে। তিনি কলিকাতা তে জন্মগ্রহণ করলেও তার আদি বাড়ি ছিল বর্তমান এ হুগলি জেলার রাধানগর এ। তার মাতৃ শিক্ষাইয়ন হয়েছিল কলকাতা র হেয়ার স্কুল এ। তোর বাবা সূর্যকুমার সর্বাধিকারী ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের প্রথম ভারতীয় ডিন ছিলেন ।
১৮৭৭ সাল থেকে ঘোড়ার সৈনিকরা ময়দানে ফুটবল খেলা শুরু করেন।নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী , মাত্র ১০ বছর বয়সে ময়দানে গড়া সৈনিকদের ফুটবল খেলা দেখে আকৃষ্ট হয়েছিল। সেখান থেকেই তিনি তার হেয়ার স্কুলে তার সহপাঠীদের সঙ্গে দলগুলো ফুটবল খেলতে শুরু করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক মি.স্টাক তার উৎসাহ দেখে তাকে খেলার প্রশিক্ষণ দেন। এ ছাড়াও তিনি কুস্তিতে পারদর্শী ছিলেন । প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি ময়দানে অন্যরকম অনেক খেলার নেতৃত্ব দিতেন। খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি বাংলা অদ্বিতীয় সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসেবে বিখ্যাত হন।
এই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন জেলার ক্লাব সংগঠন করতে থাকেন এবং তার প্রতিস্থিত প্রথম ক্লাব হলো ওয়েলিংটন ক্লাব ঘরের মাঠে দেশীয় ব্যক্তিদের প্রথম খেলার তবু হয়ে উঠেছিল। তিনি এই ক্লাবে ফুটবল , রাগবি , হকি ও টেনিস খেলার ব্যাবস্থা করেন। এছাড়াও তিনি আরো কিছু ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন যেমন বয়েজ ক্লাব ( ভারতের প্রথম ফুটবল সংগঠন) , ফ্রেন্ডস ক্লাব , হাওড়া স্পোটিং ক্লাব এবং প্রেসিডেন্সি ক্লাব প্রভৃতি। যদিও এই সব কটি ক্লাব কে মিলিয়ে পরে তৈরি হয় ওয়েলিংটন ক্লাব। এই ক্লাব এ উল্লেখ বিষয় হলো ধর্ম , জাতি নির্বিশেষে সবাই খেলতে পারতো এইপর জমিদার এর জাত, ধর্ম নিয়ে আপত্তি থাকায় বিশেষত বলা ভালো মনি দাস যে ছিলেন নিচু জাত এর তাকে নিয়ে ও আরো বাকি জন দের নিয়ে সমস্যা থাকায় নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী ওয়েলিংটন ক্লাব ভেঙে দেন। তিনি বলেন – “আমি বুকের রক্ত দিয়ে ক্লাব তৈরি করেছি , বংশ পরিচয় নিয়ে খেলোয়ার তৈরি করিনি। জাতপাত নিয়ে খেলার আসর ই সাজাবো না, তৈরি করবো খেলোয়াড় জাত”। এই খেলা নানা জাত , ধর্ম এর মানুষ কে একসাথে করে , ভেঙে দেয়না তাই তিনি এই বৈষম্য তা মানতে পারেননি।
শোভাবাজারের রাজা আনন্দ কৃষ্ণ দেবর মেয়ে কমলিনি কে বিয়ে করেন এবং ১৮৮৭ সালে স্থাপিত করেন শোভাবাজার ক্লাব। তিনি হাওড়াতে বন্ধু বামাচরণ কুন্ডুর সাথে ভারতের প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘ ট্রেডস কাপ ‘ আয়োজন করেন। তার প্রচেষ্টাতে ক্রিকেট হ্যারিসন শিল্ড প্রতিযোগিতা শুরু করেন এবং এর মধ্যে দিয়েই সাহবে দের জন্য প্রতিষ্ঠিত ক্লাবের দেশীয়দের প্রতিযোগিতা করার রাস্তা খুলে গিয়েছিল। ১৮৯২ সালে শোভাবাজার ক্লাব সমস্ত ইউরোপীয় ক্লাবকে পরাজিত করে ফ্রেন্ডস কাপ জয় করে। এটাই ছিল প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জয়। আই.এফ.এ শীল গঠনে উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র ভারতীয়। সেই বছরই আই .এফ .এ শিল্ড খেলা হয়। ১৯১১ সালে মোহনবাগান শিল্ড জয় করার আগে এটা বাঙালি ক্লাব এর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল। ১৮৯৩ সালে শোভাবাজার ক্লাব , যে একমাত্র ক্লাব ভারতীয় দল হিসাবে আই .এফ .এ শিল্ডে অংশগ্রহণ করে। তিনি ৭০০ টির বেশি ম্যাচ খেলেন ১৯০২ সাল পর্যন্ত।
নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী , যিনি শিখিয়ে ছিলেন লড়তে, হেরে যাওয়া নয় । যিনি ফুটবল এ প্রথম লাথি টা মারেন , ফুটবল খেলা শুরু করেন এবং এক একটা মানুষ কে নিয়ে একসাথে করেন ধর্ম , জাত এইসব এর ঊর্ধ্বে গিয়ে। তিনি প্রথম যে খেলার মাঠ মানুষ কে বাঁধে , ভেঙে না সেটা বুঝান এবং ব্রিটিশ দের চোখ এ চোখ রেখে কথা বলেন এবং শেষ এ ফুটবল খেলা টাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। আমদের গর্ব আমাদের বাঙালি এবং আমরা গর্বিত আমরা বাঙালি।
কলমে – পারিজাত সাহা
A must watch video for all