কলমে – সোমা স্বর
“বামা, ও বামা শুনছিস?” , চাটুজ্জে গিন্নি হাঁক দিচ্ছেন। বামা রীতিমতো ছুটে এলো, “কি হয়েছে মা?” সারাদিন কি করিস তুই, পাত্রপক্ষ যে তোকে দেখতে আসছে তার হুঁশ আছে!
এমনি সময় নিচে শোরগোলের আওয়াজ শোনা গেল। চাকরটা ছুটে এসে বলল,’গিন্নিমা পাত্রপক্ষ যে এসে গেল, তাড়াতাড়ি আসুন।
উপরের ঘটনাটির সময়কাল হল উনিশ শতক। উনিশ শতকে বাংলাতে নারীদের সামাজিক অবস্থান কেমন ছিল কমবেশি আমরা প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু সেই সময় এমন অনেক নারী ছিলেন যারা নিজেদের সামাজিক অবস্থান লিখে গেছেন। উনিশ শতকের এমনই একজন বাঙ্গালী নারী হলেন কৈলাসবাসিনী দেবী। বলাবাহুল্য, এই শতকের বাংলায় গড়ে উঠেছে বাঙালি নারীদের নিজস্ব বয়ান, আর সেই বয়ান এর মধ্যে অন্যতম একটি বয়ান হল কৈলাসবাসিনী দেবী রচিত “বাঙালি হিন্দু মহিলাদের হিনাবস্থা” l আর এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে একজন নারীর জন্ম থেকে শুরু করে বিবাহ পর্যন্ত অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত কত রকমের কষ্ট স্বীকার করতে হয় তা আমরা জানবো।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ( প্রথমেই বলে রাখি, উনিশ শতকের বাঙালি সমাজে নারীদের আত্মজীবনী খুবই কম দেখা যায়। তাই এখানে কৈলাসবাসিনী দেবীর আত্মজীবনী বর্ণনা করা হয়নি, তার লেখনীর মধ্যে দিয়ে কিভাবে নিজের এবং বাঙালি নারীদের দুর্দশা ভোগ করতে হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়েছে। কৈলাসবাসিনী দেবীর প্রবন্ধ যখন প্রকাশ করা হয়েছিল তখন সেটা তার স্বামীর নামে প্রকাশিত হয়েছিল। কৈলাসবাসিনীদেবী হলেন বাঙালি একজন গৃহবধূ, যিনি তার স্বামীর কাছে রাত্রিবেলা করে বাংলা লেখাপড়া শিখতেন এবং তার স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই তিনি এই প্রবন্ধটি লিখেছিলেন।)
This article is brought to you by
কৈলাসবাসিনী দেবী বলছেন কন্যা সন্তান জন্মানো যেন রীতিমতো পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল উনবিংশ শতকের সমাজের কাছে। এমনকি জন্মদাত্রী মাতাও কন্যাকে দেখে অধিকতর দুঃখ পেতেন। সেই মেয়েটিকে তার শৈশব থেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা হতো না বিদ্যালয় প্রেরণ করা হতো না কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল মেয়েটিকে কৈশোরে পা দেওয়ার সাথে সাথেই কুলীন ব্রাহ্মণ এর সাথে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা। মনে করা হতো এতেই নাকি তার মঙ্গল। তার পরিবারের মনে হত যে, মেয়েদের বিদ্যা শিক্ষার দরকার নেই ঘরে বসে ঘরকন্নার কাজে মন দিলে ওদের আরও বেশি মঙ্গল। তাই বাবা কন্যাকে শিক্ষাতো দিতেন না বরং অলীক আমোদপ্রমোদ ও বৃথা খেলায় নিয়োজিত করতেন।
কৈলাসবাসিনী দেবী বিদ্যা চর্চার কথা বলেছেন সেখানে বলছেন, তৎকালীন সময় মনে করা হতো যে নারীগণ বিদ্যা শিখলেই বিধবা হয়। আবার কেউ বলে এরা বিদ্যাচর্চার প্রবৃত্ত হলে আর কোনরকম সাংসারিক কাজে হস্তক্ষেপ করবে না, আবার কেউ বলে নারীরা বিদ্যা শিক্ষা অর্জন করলে নিজের স্বামীকে উপেক্ষা করে স্বাধীন হতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এসবের উত্তরে কৈলাসবাসিনী দেবী বলেছেন, নারী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সংসারযাত্রা সুনির্বাহ, সেই শিক্ষার জন্য পুরুষসম্পর্কহিত অন্ত্বপুর তুল্য বিদ্যামন্দির প্রয়োজন নারীকে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা মুক্ত করার মত ও সম্ভাবনা আর নেই। অর্থাৎ শিক্ষাটা শুধুমাত্র অন্তঃপুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা থেকে কেউ যদি স্বাধীন হতে যায় তাহলে সেটাকে অশুভ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ( আমাদের মনে রাখা উচিত কৈলাসবাসিনী দেবী একজন উনবিংশ শতকের বাঙালি নারী তার পক্ষে এরকম মনোভাবই পোষণ করা সম্ভব।)
উনবিংশ শতকের সূচনাকালে এদেশের মেয়েরা ছিল শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত বাইরের পৃথিবীর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন, মানবিক প্রায় সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। কন্যাসন্তানের পৃথিবীতে আগমন কে শঙ্খধ্বনি দিয়ে কেউ স্বাগত জানাতে না। অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের ভার সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হতো। ভালোভাবে কিছু বোঝার আগেই বিয়ে হয়েছে তো, কৈশোরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পুরুষের শয্যা সঙ্গীনি হতে হতো। আর কৈশোর না পেরোতেই শুরু হতো সন্তানের জন্মদান। নারীর জীবনের চাকা এভাবেই ঘুরতো। কিন্তু তার মধ্যেও এমন অনেক প্রতিভাবান বাঙালি নারী ছিলেন যারা আমাদেরকে উনবিংশ শতকের বাঙালি নারীর ইতিহাস কে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে।
একুশ শতকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে নারীবাদ সেখানে একটি স্বআলোচিত বিষয়, সেখানে আরেকবার পিছনে ঘুরে তাকালেই বোঝা যাবে নারীর ইতিহাসের শুরু কিন্তু এনাদের হাত ধরেই।
‘ভুলে যাওয়া বাঙালি’ এই শিরোণামে প্রতি বুধবার ও রবিবার আমাদের ওয়েবসাইট www.saptarshinag.in এ প্রকাশিত হবে একটি করে অধ্যায় | আর সেই লেখা হবে তোমাদের | বাংলার এমন কৃতি সন্তানরা যাঁদের আজ মানুষ ভুলে গেছে তাঁদের নিয়ে গবেষনামূলক লেখার সিরিজ এটি | লিখতে হবে বাংলায় | সেরা লেখাগুলো স্থান পেতে পারে kindle এ প্রকাশিত বইয়ে | তাই চটপট পাঠিয়ে দাও নিজের লেখা nagsaptarshi@gmail.com এই মেইল আইডি তে | ওয়ার্ড ফাইল এ শুধুমাত্র পাঠানো যাবে লেখা | লেখার গুণমান বিচার করে শুধুমাত্র ভালো লেখাই কিন্তু প্রকাশ পাবে | শব্দের কোনো সীমারেখা নেই | লেখা পাঠানোর ও ডেডলাইন নেই | এই সিরিজকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব ও তোমাদের |
A must-read for all…
Thought- provoking but short . Arek tu simito kintu elaborate hole Bhalo hoto…