দেশপ্রেম

সপ্তর্ষি নাগ

‘দেশপ্রেম’ একটা খুব মিষ্টি শব্দ, মানে হিংস্রতার লেশমাত্র সেখানে থাকা উচিৎ না। মায়ের কাছে সন্তানের ভালোবাসা নিবেদনে আবার কিসের হিংস্রতা? শব্দটা খুব subtle কিন্ত কোথায় যেন খুব আবেগে ভরা। মানে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে গিয়ে ‘জন গণ মন’ শুনলে ইচ্ছে করবে দাঁড়িয়ে যেতে, নিজের অজান্তে নিজের হাত বুকে রাখতে,নিজের প্রত্যেকটা দাঁড়িয়ে যাওয়া লোমকে অনুভব করতে, অনুভব করতে অন্তরের সীমাহীন কিন্তু চটকদারিতে না হারানো দেশের প্রতি শ্রদ্ধাকে । আর হ্যাঁ, সৎ থেকে সেই দেশকে নিজের খুব সীমিত ক্ষমতার মধ্যে সেবা করতে। হ্যাঁ, দেখনদারি বেশি থাকবে না, লোক দেখানো
হুঙ্কার থাকবে না। সেই হুঙ্কার তো মনের ভেতর প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে থাকবে। প্রতিদিন কাজের মধ্যে, যে কৃষক সেবা পেতে আসে একজন আমলার কাছে বা একজন কেরানির কাছে,যে মা তাঁর মেয়ের সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার পরে আসে বেঁচে থাকা একটা বাচ্চার জন্য কয়েকটা টাকা সরকার থেকে পেতে,যে সাধারণ মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে আসে একটা সমস্যা নিয়ে, তার বা তাদের সমস্যা প্রশাসনিক রেডটেপিজম এ না রেখে, কিছু সময় দিয়ে শোনা আর খুব দরকারি VIP শিডিউল থেকে একটু সময় বের করে তাদের সময় দেওয়া টা ও তো দেশপ্রেম। সেজন্য শহীদ হতে হয় না। বর্ডারে মাইনাস কুড়ি ডিগ্রিতে অতন্দ্রপ্রহরাও দিতে হয় না।

যে যুবকের চাকরি নেই, কিন্তু পকেটে ১০০ টাকা আছে, সে যদি রাস্তার পাশে না খেতে পাওয়া অসহায় মা ‘কে তার ছেলের খাওয়ার জন্য একটা দশ টাকার নোট দেয় তার চেয়ে বড় কে দেশপ্রেমী আছে?

কিন্তু সময়টা বড্ড লাউড। মানে, দেশপ্রেম দেখাতে হলে তো তোমাকে বড়সড় কিছু করতেই হবে। যে গৃহবধূ স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া সারাদিনের সংসার খরচের টাকা থেকে গুটিকয় টাকা বাঁচিয়ে বাড়িতে মাসে একদিন অনেক আশা নিয়ে আসা অবলা, অসহায়, পঙ্গু মেয়েটাকে কয়েকটা টাকা বা একমুঠো চাল দেয়, সেই মহিলার চেয়ে বড় দেশপ্রেমী আর কেউ আছে? কিন্তু ওই যে, হুঙ্কার।সে হয়তো জানেও না তাকে তার দেশপ্রেম দেখাতে ওই দানের পরে একটা হুঙ্কার দিয়ে সেটা রীল বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে হত, তাহলে দেশ তাকে দেশপ্রেমী মানতো। সে ভাইরাল হত।মানে হুঙ্কারময় শর্টস, রীল নইলে বস্তাপচা আবেগের শস্তা হুঙ্কার। ডঙ্কা ছাড়া, হুঙ্কার ছাড়া কি আর দেশপ্রেম হয় ভায়া? সেটাই ট্রেন্ডিং। সেটাতেই দেশ তোমাকে স্যালুট করবে।

কিন্তু প্রেম শব্দ বড়ই জটিল হে। অন্তর্নিহিত ফল্গুধারার মতোই শীতল, স্নেহমাখা আর সুন্দর। তার প্রকাশ পাক মেরুদন্ড সোজা রেখে, কর্তব্যপালনে। অব্যক্ত কথাই ইতিহাস গড়ুক ভালোবাসার। সেখানে দেখনদারির ভণ্ডামি নিপাত যাক। দেশ হোক, বা পরিবার। দায়িত্ব হোক বা প্রতিশ্রুতি। অব্যক্ত কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস সবকিছুর উর্দ্ধে পূজিত হোক দেশমাতৃকা বা নিজের শ্রদ্ধার মানুষরা, স্নেহের পরশে পুণ্য আর পূর্ণ হোক কাছের মানুষরা । জয় হোক স্বার্থের বাইরে, লাভ- লোকসানের উর্দ্ধে গিয়ে, সারাদিনের শেষে আয়নায় নিজের মুখ গর্বের সঙ্গে দেখবার স্পর্ধার ।সেটাই দেশপ্রেম। জয় হোক সেই সততার,সেই জৌলুসহীন ভালোবাসার।

এই অধমের অভিধানে ‘জয় হিন্দ’ মানেটা সেটাই।
সেই অহংকারে কাল ও ছিল, আজও আছে, সারাজীবন অমর থাকবে একটাই ধ্বনি –
‘জয় হিন্দ’।

News Reporter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *