হিচকক আর টারান্টিনোর মেলবন্ধন – স্ট্রেঞ্জ ডার্লিং

সপ্তর্ষি নাগ

বাইরের দুনিয়ায় যাকে বলে ইনডিপেনডেন্ট ছবি অর্থাৎ কোনো বড় প্রোডাকশন হাউস তার পেছনে নেই, না আছে বড় বড় অভিনেতা বা অভিনেত্রী, এরকম ছবির আলাদা একটা বাজার আছে। হিচকক যখন প্রথম এসেছিলেন তাঁর প্রথম ছবি ‘ The Pleasure Garden’ অনেকটা এরকমই ছবি ছিল | পুরোদস্তুর রোমান্টিক ছবি আর সেই ১৯২০র দশকে লোকে এরম এক আনকোড়া পরিচালককে পাত্তাও দেয় নি | তাঁর লেখা বব, পিট আর জুপিটার কে চরিত্র বরং তখন বেশি গুরুত্ব পেতো, যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আমাদের পান্ডব গোয়েন্দার লেখক ষষ্ঠীবাবু ফলো করেছিলেন। যাই হোক হিচককের পরবর্তী সাফল্য আর তাঁর প্রথম জীবনের ব্যর্থতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ হন আরেক পরিচালক। যিনি সেই ৯০ এর দশকে হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা দিয়ে একটা মাস্টারপিস বানিয়ে দেন।কোনো বড় প্রোডাকশন হাউস পেছনে নেই, বড় বাজেটও নেই তাও মাস্টারপিস। সেখান থেকেই আক্ষরিক অর্থে এইসব ইনডিপেনডেন্ট ছবি বা ইন্ডি ছবি মানুষের মনে জায়গা নিতে থাকে। সেই পরিচালক কোয়েন্টিন টারান্টিনো আর সেই ছবি রিসার্ভয়র ডগস। যা দেখে মানুষ হতবাক হয়েছিলেন। পরে তাঁর Pulp Fiction মুক্তির আগেই তকমা পেয়ে যায় মাস্টারপিসের। আর তিনিও চলে আসেন পরিচালক হিসেবে প্রথম সারিতে। আর সেইসময় থেকেই ইন্টারন্যাশনাল ছবিতে চলে টাইমলাইন নিয়ে খেলা করা। এটা একটা অদ্ভুত আর্ট। একটা গল্প বলার হবে কিন্তু ঠিক পর্যায়ক্রমে না। পাঠককে বুঝে নিতে হবে পর্যায়। আর শেষে গিয়ে মনে হবে এ বাবা, ওই জায়গাটা টো তখন মিস করে গেছিলাম, আরেকবার দেখতে হবে।

হিচককের রহস্য আর টারান্টিনোর এই সময় নিয়ে খেলা এর এক অপূর্ব মেলবন্ধন অবশেষে পেলাম ইদানিংকালের সেরা ইন্ডি ছবি ‘স্ট্রেঞ্জ ডার্লিং’ এ। গোটা ছবি ৬টা চ্যাপ্টার এ ভাগ করা কিন্তু চ্যাপ্টারগুলো পরপর আসে না | শুরু হয় চ্যাপ্টার ৩ দিয়ে আর তারপর চলে আসে চ্যাপ্টার ১ তারপর আবার চ্যাপ্টার ৫। এরকম করে একটা সত্য ঘটনা যেটা আমেরিকার ইদানিংকালের সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে তৈরি ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। আর মোটামুটি ছবির শেষ আধা ঘন্টাতে গিয়ে দর্শকদের অবস্থা খারাপ। যা ভেবে আসা হচ্ছিলো বিষয়টা একেবারেই তা নয়। যার জন্য সহানুভূতি দেখাতে হচ্ছিলো শুরুতে পরে পুরো চিন্তাটাই বদলে যায়।

জে টি মোলনারের আগের কোনো কাজ দেখিনি। না দেখেছি উইলা ফিতজজেরাল্ড এর কোনো ছবি। কিন্তু ছবিটা দেখতে দেখতে রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। তেমন কোনো খরচা নেই, না আছে বড় প্রোডাকশন ভ্যালু। কিন্তু শুধুই ভালো ছবি বানানোর ইচ্ছা, অর্থ, নামযশ সবকিছুর উপরে গিয়ে চলচ্চিত্রকে নতুন আঙ্গিকে মানুষকে দেখানোর অভিপ্রায়। আর সেখানেই বাজিমাত এই ছবির।
এই ছবি যেন এই বাংলার উঠতি পরিচালকড়া অবশ্যই দেখে। কালজয়ী নভেলিস্ট স্টিফেন কিং পর্যন্ত জানিয়েছেন এই ছবি ইদানিংকালে তাঁর দেখা সেরা থ্রিলার।
একবার তাই দেখতেই হবে ‘স্ট্রেঞ্জ ডার্লিং ‘
রেটিং – ১০ এ ৯

News Reporter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *