কলমে সুমনা চ্যাটার্জী
পেরেছে অর্ক পেরেছে। অন্তত একজন অবলার সবলা হওয়ার পথকে সে প্রশস্ত করতে পেরেছে।এই একবিংশ শতাব্দী তে দাড়িয়েও যখন বাল্য বিবাহ,অশিক্ষায় জর্জরিত করুন মুখগুলোকে দেখে মনটা তার হুহু করে ওঠে।করোনা কালে এমন কত অবলা কে যে বাল্য বিবাহের যুপকাষ্ঠে বলি হতে হলো সংখ্যাটা এখনও অজানা।তবে আজ খবর পাওয়া মাত্র এক মুহুর্ত দেরি করেনি সে,প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার করতে পেরেছে বারো বছরের সুষমা কে।যাতে কোনোভাবেই তার পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায় তার দ্বায়িত্ব ও নিয়েছে সে।ফোনটা বেজে উঠলো হঠাৎ,ওপাশে সুদীপের গলা”আ রে ভাই তুই তো হিরো হয়ে গেলি,ফেসবুক এ তোর ছবিতে লাইক র বন্যা”।
ভাবছিল অর্ক এক অবলার জীবনে এই সামান্যতম অবদান তাকে “হিরো” বানিয়ে দিল অথচ যে মানুষটা বছরের পর বছর সমাজের সব চোখ রাঙানি কে উপেক্ষা করে অবলাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন,যাকে স্বয়ং শিবনাথ শাস্ত্রী বলেছেন” আমাদের হিরো” সেই ‘অবলাবান্ধব’কে আজ ভুলেছে আত্মবিস্মৃত বাঙালি।বাংলার প্রথম মহিলা গ্রাজুয়েট থেকে প্রথম মহিলা ডাক্তার বা যদি বলা হয় কংগ্রেসে মহিলাদের প্রবেশ সব পথকেই প্রশস্ত করছেন এই অবলাবান্ধব দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় অথচ এই যুগপুরুষ দুঃসাহসিক প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারকের কথা আমাদের অজানা।তিনি আজও প্রচ্ছন্ন সমাজের কাছে।না, আর দেরি করলনা অর্ক।অন্তত তার তরফ থেকে যেটুকু সম্ভব সে করবে।বেছে নিলো তাকে একদিনের “হিরো” বানানোর মাধ্যম কেই এই প্রচ্ছন্নে থেকে যাওয়া মানুষটির অবিশ্বাস্য কিছু কর্মকাণ্ডকে প্রকটে আনার জন্য।যদি সামান্য কিছু মানুষ কেও অবগত করতে পারে তার এই প্রচেষ্টা। লেখাটার নাম দিল
নারীদরদি দ্বারকানাথ
দ্বারকানাথের জন্ম বিক্রমপুরের মারখন্দ গ্রামে ১৮৪৫ সালের ৯ বৈশাখ।কিশোর বয়স থেকেই বাংলার পীড়িত মেয়েদের দুঃখ কষ্ট তাঁকে নাড়া দিত।কুলীন পরিবারের সন্তান হয়েও জেদ ধরে বসলেন “আমি দ্বিতীয় বিবাহ করবনা” ত্যাজ্য পুত্র করলেন পিতা তবে তা টলাতে পারেনি তাঁর নারীদরদী মনকে, ১৮৬৯ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হল “অবলাবান্ধব” পত্রিকা, এটি বিশ্বের প্রথম পত্রিকা যা সম্পূর্ণ ভাবে নারীদের উন্নয়ের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত।যা পড়ে কলকাতার ব্রাহ্ম যুবকরা বিস্মিত। তারা ভাবলেন দূরবর্তী গ্রাম থেকে কে এই ব্যক্তি যিনি নারীজাতির শিক্ষা ও উন্নতি সম্মন্ধে এমন মত ব্যক্ত করেন।অবলাবান্ধব এলেন কলকাতায় ।শুরু হল তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ।বাংলায় স্ত্রী শিক্ষা প্রসারে একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রয়োজন ছিল।কি সেই দৃষ্টান্ত? না, যেকোন একজন বা কএকজন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে নিজেদের নিয়ে যাবেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করবেন।এগিয়ে এলেন দ্বারকানাথ প্রতিষ্ঠিত হল হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়,১৮৭৩।বেথুন স্কুল কমিটির রিচার্ড গার্ড একবার দুই স্কুলের তুলনামূলক আলোচনা করে বলেন,একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি স্কুল নারী শিক্ষায় যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, সরকারি কোনো স্কুলে সেই মানের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেই।।কাদম্বিনী ও সরলা বসুর পরবর্তী জীবনে সাফল্য ও সেটাই প্রমাণ করে।স্কুলের পাঠ্যাদির ব্যবস্থা ,ছাত্রীদের আহার, চিকিৎসা সবই দ্বারকানাথ সামলাতেন একা হাতে।দ্বারকানাথ বরাবরই ছেলে ও মেয়েদের পাঠক্রমের সামঞ্জস্যতায় বিশ্বাস করতেন ,মেয়েরা জ্যামিতি ও বিজ্ঞান পড়তে পারেনা এমন ধারণাকে তিনি প্রশ্রয় দেননি, নিজে হাতে বাংলায় বিজ্ঞান বই লিখেছিলেন তার বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পঠনের উদ্দেশ্যে।শুধুমাত্র দ্বারকানাথের মত বিরল কিছু মানুষের জন্যই স্ত্রীশিক্ষা আধুনিকতার অভিমুখে কয়েক পা এগোতে পেরেছে।নবজাগরণের বহু নেতার মত ঘরে রক্ষনশীল ও বাইরে প্রগতিশীলতার সমর্থক গোছের কোনো দ্বিচারিতা তাঁর মধ্যে ছিলনা।কাদম্বিনী গাঙ্গুলি তাঁর একদা ছাত্রী পরবর্তী কালে স্ত্রী হলেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ।তিনি বরাবর ই চেয়েছিলেন নারীর উপার্জনের পথকে প্রশস্ত করতে। দ্বারাকনথের বহু আন্দোলনের পর মেডিক্যাল কলেজের দ্বার উন্মুক্ত হয় মহিলাদের জন্য।কাদম্বিনী হন প্রথম প্র্যাক্টিসিং মহিলা বাঙালি ডাক্তার।দ্বারকানাথের উৎসাহেই রাজনীতির আঙিনায় মহিলাদের প্রবেশের পথ প্রশস্ত হয়।তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান আ্যসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় মহাসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তিনি নারীদের ডেলিগেট হওয়ার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।১৮৮৯ সালে কংগ্রেস সেই দাবি পূরণ করে ও পঞ্চম অধিবেশনে ৬ জন মহিলা অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অক্লান্ত আন্দোলনের ফলেই ভারতীয় নারীরা এই অধিকার অর্জন করেন এমনকি ইংল্যান্ডেও তখন নারীরা এই অধিকারে বঞ্চিত ছিলেন। তাঁর কর্মকাণ্ড শুধু কলকাতার বুকেই সীমিত ছিলনা তিনি আসামের নিপীড়িত কুলিদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন এবং সেই জ্বালাময়ী লেখা প্রকাশ করেন বেঙ্গলি ও সঞ্জীবনী পত্রিকায়।চাপের মুখে ব্রিটিশ সরকার এই কুলিদের জন্য আইন প্রণয়নে বাধ্য হয়।দ্বারকানাথ সম্পর্কে তাঁর কৃতি ছাত্রী অবলা বসু লেখেন” দ্বারকানাথ যে কি রকম লোক ছিলেন ,তাহা প্রকাশ করিতে পারিনা।এমন সর্বতোমুখি প্রতিভা খুব অল্প লোকেই দেখা যায়।সর্বকার্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ।কোথাও কোনো নারী বিপদের সম্মুখে তিনি প্রাণের ভয় ছাড়িয়া তাহাকে উদ্ধার করিতে গেলেন। মেয়েদের বিদ্যালয় নাই তিনি সকল শক্তি প্রয়োগ করিলেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়”।আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলার নবজাগরণের মশাল সাফল্যের সঙ্গে যারা বহন করেছিলেন দ্বারকানাথ তাদের মধ্যে অন্যতম।সেযুগে দাড়িয়েও বলিষ্ঠ হস্তে তিনি প্রশস্ত করেছেন নারীর উত্থানের পথকে।বহুবিবাহ ,বাল্য বিবাহ থেকে পর্দাপ্রথা নারীদের সমাজে সসম্মানে প্রতিষ্ঠায় সব আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোভাগে।আজ একবিংশ শতকে দাড়িয়েও বহু অবলা নিপীড়িত শোষিত কিন্তু আত্মবিস্মৃত বাঙালি তাঁকে মনে রাখেনি।এটাই ইতিহাসের পরিহাস।লেখাটা পোস্ট করল অর্ক।জানেনা কটা মানুষই বা পড়বে এই লেখা তবে এমন একজন যোদ্ধার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সে করল তার এই লেখার মাধ্যমে।।
‘ভুলে যাওয়া বাঙালি’ এই শিরোণামে প্রতি বুধবার ও রবিবার আমাদের ওয়েবসাইট www.saptarshinag.in এ প্রকাশিত হবে একটি করে অধ্যায় | আর সেই লেখা হবে তোমাদের | বাংলার এমন কৃতি সন্তানরা যাঁদের আজ মানুষ ভুলে গেছে তাঁদের নিয়ে গবেষনামূলক লেখার সিরিজ এটি | লিখতে হবে বাংলায় | সেরা লেখাগুলো স্থান পেতে পারে kindle এ প্রকাশিত বইয়ে | তাই চটপট পাঠিয়ে দাও নিজের লেখা nagsaptarshi@gmail.com এই মেইল আইডি তে | ওয়ার্ড ফাইল এ শুধুমাত্র পাঠানো যাবে লেখা | লেখার গুণমান বিচার করে শুধুমাত্র ভালো লেখাই কিন্তু প্রকাশ পাবে | শব্দের কোনো সীমারেখা নেই | লেখা পাঠানোর ও ডেডলাইন নেই | এই সিরিজকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব ও তোমাদের |
Excellent , outstanding….
We want more writings like this from you…
Carry on 🙏🏻🙏🏻🙏🏻