সপ্তর্ষি নাগ
আমরা এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছি আর বেকারত্ব সূচক রাজ্য বা দেশে যে অবস্থায় আছে সেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভালো শিক্ষার আর তার চেয়েও ভালো শিক্ষকের চয়ন। সোশ্যাল মিডিয়ার কদাকার অবস্থা দেখে সেখানে নিজস্ব মতামত দেওয়া অনেকদিন আগেই বন্ধ করেছি। নিজের ওয়েবসাইট নিজের কথা বলবার সেরা জায়গা, কারো সেখানে এসে নেগেটিভিটি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই যেহেতু কন্ট্রোল বোতাম আমার হাতে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে ভালো কি হয় জানি না, অত্যন্ত নিম্নমেধার মানুষদের ও যখন দেখি এই কোর্স সেই কোর্স নিয়ে ভাষণ দিচ্ছে, বড্ড খারাপ লাগে তাদের কথা ভেবে যারা সেইসব লোকেদের কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করছে।
ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা আরো শোচনীয়। শিক্ষকচয়নের যোগ্যতার অভাবে তাদের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের আগে, কতগুলি প্রশ্ন কমন। পিডিএফ নোট থাকবে? যদি ক্লাস মিস করি রেকর্ডিং পাবো? বাংলায় নোট দেবেন? লক্ষ্য করে দেখবে সবগুলো প্রশ্ন নেগেটিভ। নোট থাকবে তো? অর্থাৎ প্রকারান্তরে স্বীকার করা, নিজেকে খেটে পড়াশুনো করতে হবে না তো? যদি ক্লাস মিস করি, মানে শুরু থেকেই প্রস্তুতি ক্লাস না করার। বাংলায় নোট দেবেন তো? অর্থাৎ ইংরেজিতে নোট শুরু থেকেই ভয়। এই প্রশ্ন আজকাল কোনো ছাত্রকে করতে শুনি না, যিনি পড়াবেন তাঁর যোগ্যতা কিরকম? তাঁর legacy কিরকম? তিনি নিজে কিভাবে শিক্ষক হলেন? শিক্ষকতা ভালোবেসে? নাকি তাঁর শিক্ষকতা তাঁর নিজের সেই পরীক্ষায় না পাওয়ার ফল যেখানে তিনি ছাত্র পড়ান?
এমন অনেককে দেখেছি যারা কম্পিটিটিভ পরীক্ষার শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেন। তাদের পড়ানো নেশা। বেকারত্বের কুফল না। কিন্তু পড়ানো যদি পরীক্ষা পাশ না করতে পারার ফল হয় তবে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর।
আমি ছেলেমেয়েদের পড়াতে গিয়ে তাদের এমন ভয়ঙ্কর কিছু ভুল দেখি, স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কিকরে বা কোথা থেকে শিখলো এসব? উত্তর, ওই যে স্যার ওই স্যার YouTube এ বলেছিলেন। কোন স্যার, কিসের স্যার? YouTube এ তো সবাই স্যার। কেউ স্যার না বললে নিজেই নিজেকে বলে দাও স্যার। আর দাবি করে ফেলো, পরীক্ষায় পাশ করার চাবিকাঠি নাকি তোমারই কাছে আছে। আরেবাবা, নিজের পরীক্ষার রেজাল্ট একবার দেখাও দিকি। যত্তসব!
ইদানিং আবার আরেক রকমের ষাঁড় থুরি স্যার দেখি। এরা পড়ালে সেই ক্লাসে সারাবছরে মেরেকেটে আট দশ জন ছেলেমেয়ে থাকে। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে এদের বিজ্ঞাপন দেখে তা বোঝার দায়। ১ থেকে ১০ এর মধ্যে এদের ৭ জন। ১ থেকে ১০০র মধ্যে এদের মোটামুটি ৮০। আমি ভাবি, বাকিরা দোষটা কি করলো? নিয়ে নে বাবা, ১ থেকে ১০০ সব জায়গাগুলো। মিথ্যার উপর ভর করে ওই দুতিন বছর পয়সা হয়তো কামানো যাবে কিন্তু অর্থ উপার্জন হবে না। পয়সা কামানো আর ‘অর্থ’ উপার্জনের পার্থক্য অবশ্য এই স্যারদের ঘটে ঢুকবে না।
মোদ্দাকথা, চটকদারি দুনিয়ার ভেতর সবদিকেই ঠনঠনিয়া। চাকরির বাজার একে তলানিতে। তার উপর ‘স্যার’দের আর ম্যামদের দাপট ! সবার দাবি, সেই নাকি সেরা। বাংলা উচ্চারণে ‘স’ আর ‘শ’ পার্থক্য বোঝা যায় না কিন্তু সেও দাবি করছে, এই বাজারে সেই নাকি সেরা শিক্ষক। WBCS কে ‘ডাবলু বি she esh’ বলছে আবার সেই নাকি ওই পরীক্ষার ইংরেজির প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক। আর এইসব কিছুই চলছে কোথায়? আজ্ঞে হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়াতে। তাই, ওই যে বললাম, সোশ্যাল মিডিয়া আর তার ‘ষাঁড়’ দের থেকে সাবধান। গুঁতোতে ভবিষ্যৎ দফারফা হতে পারে। ‘Know Your Teacher’ – এই কথাগুলো তাই ভুলো না।

