সপ্তর্ষি নাগ
আমি কম্পিটিটিভ পরীক্ষার ছাত্রছাত্রীদের বাংলা হোমওয়ার্ক চেক করার সময় যেসব গলতি বা বেশকিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি দেখি সেগুলো একজায়গায় করে ওদের পরামর্শ দিলে অনেকেই টুকিটাকি ভুলগুলো শুধরে নিতে পারে। তাই এই সিরিজ শুরু করলাম।আজকের এই লেখায় কিছু ভুল উল্লেখ করছি বা সংশোধনের উপায় ও বলছি। সেইসঙ্গে বলছি ভালো লেখার কায়দাও।আজকের পর্বে আলোচনা করছি শুধুই বঙ্গানুবাদ নিয়ে। পরের পর্বে সারাংশ বা সারমর্ম।
প্রথমেই আসি বঙ্গানুবাদের কথায়। অনুবাদ শব্দকে ছেলেমেয়েরা বড্ড বেশি অনুবাদ করে নেয়। মানে ভাবের বালাই নেই অনুবাদ শুরু হয়ে যায়। আরে বাবা শুরুতে লেখাটা বারবার পড়ো। বোঝার চেষ্টা করো লেখক কি বলতে চাইছেন। বারবার পড়ার পরে তারপর লেখার কথা ভাবো। এমন অনেক বঙ্গানুবাদের প্রশ্ন আমি WBCS,ক্লার্কশিপ বা Miscellaneous পরীক্ষার প্রশ্নে দেখেছি যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে একেবারে সহজ। কোনো জটিল শব্দ নেই বললেই চলে। ছেলেমেয়েরা শুরুতেই খোঁজে কোনো জটিল শব্দ আছে কিনা। যদি না থাকে ব্যস ! শুরু হয়ে যাবে কলম চালানো। প্রথমে শব্দ আর তারপরে বাক্যের অনুবাদ হবে। হয়তো বা সেই অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যের সঙ্গে এক্কেবারে চতুর্থ বাক্যে গিয়ে সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেটা তো দেখার সময় নেই। জটিল শব্দ নেই মানে বঙ্গানুবাদ সোজা। অতএব চালাও কলম। ব্যস লেখার ছন্দপতন ওখানেই শুরু। সহজ শব্দের আড়ালে যে উপলব্ধি বা অনুভব লুকিয়ে আছে সেটা ধরতে না পারাতে লেখা যখন শেষ হচ্ছে যে বস্তুটি তৈরি হল তা বঙ্গানুবাদ কেন কোনো অনুবাদই না। ভালো নম্বর পাওয়ার আশা শেষ। পরে রেজাল্ট বেরোনোর সময় বুক উঁচিয়ে বলবে, আরে আমি তো দুর্দান্ত দিয়েছিলাম পরীক্ষা, নিশ্চয়ই কোনো কারচুপি আছে।
অনুবাদ দিলে সাধারণত যে লেখাগুলো দেওয়া হয় তা কিন্তু তোমার পাড়ার মোড়ের কেষ্টদা বা বিষ্টুদার লেখা না। সেগুলো সাধারণত সাহিত্যজগতে স্মরণীয় কোনো কাজ। যদিও মাঝে মাঝে ইদানিং উঠতি প্রতিভাবান লেখকদের লেখাও দেওয়া হয়। মোদ্দা কথা হল, সেই লেখার অনুবাদ করার সময় তোমরা বড্ড বেশি পরীক্ষা বা নম্বরকেন্দ্রিক চিন্তা রাখো। এরফলে না হয় অনুবাদ, না আসে নম্বর। যায় দুই কূলই।
তাই ওই ধর তক্তা মার পেরেক পদ্ধতি না নিয়ে একটু ধীরে চলো। লেখার রূপ, রস, গন্ধ অনুভব করো। হৃদয়ে নাও সেই লেখার অদৃশ্য ছোঁয়া। অনুভব করো লেখকের কলমের অভিপ্রায়। প্রথম থেকে শেষ বাক্য পর্যন্ত চলছে যে স্রোতস্বিনী তার ফল্গুধারায় সিক্ত হয়ে তারপর ধরো কলম।
অর্থাৎ লেখার ভাব যখন ধরে ফেললে তোমার কাজ আধা শেষ। এবার একখানা খসড়া লিখে ফেলো দিকি আর একবারও ওই লেখাটা না পড়ে। তারপর খসড়া মেলাও মূল লেখার সঙ্গে। হতেই পারে কোনো বিশেষ জায়গা বা ভাব বাদ পড়ে গেল। খসড়ায় সেটা ঢুকিয়ে দাও। ব্যস, ভাবের মাংস আর শব্দের অন্নে তৈরি অনুবাদের শাহী বিরিয়ানি।
মানলাম তুমি ভাষাপ্রয়োগে বিশাল পন্ডিত। তোমার হাত নিশপিশ করে কঠিন শব্দ প্রয়োগে। একটু রাশ টানো হে। তুমি কম্পিটিটিভ পরীক্ষার সামান্য একটা লেখা লিখছো, ইউনিভার্সিটির সাহিত্য প্রতিযোগিতার লেখা না। দুটো কঠিন শব্দ ব্যবহার করে তারপর আবার ফাঁকা চারণভূমিতে আছড়ে না পড়ে চেষ্টা করো না সহজ সরল ভাষায় লেখাটা লিখতে। ফ্লো যেমন থাকবে, লেখা হবে সুপাঠ্যও। দিনের শেষে লক্ষ্য তো একটাই- সুন্দর কিছু লিখে পরীক্ষকের মনটা ভালো করে দেওয়া, নিকুচি করেছে নম্বরের। ওটা এমনিতেই আসবে যদি না ওর পেছনে তুমি বেশি ছোটো। ভালো পরিচালক ছবি শেষ করে নিজে বারবার দেখেন। যতক্ষণ না তাঁর মন ভরছে ওই ছবি তিনি আনবেন না দর্শকমাঝে। আর কারো তৃপ্তি না আগে দরকার নিজের তৃপ্তি। তোমার লেখা পড়ে যখন মন থেকে অজান্তেই ‘আহাঃ’ বেরোবে, বুঝবে এবার ভালো নম্বর শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
অনেকসময় ছেলেমেয়েরা বঙ্গানুবাদের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদে উল্লেখ নেই এমন শব্দের বাংলা ব্যবহারে ভয় পায় বা তারা যেভাবে শিখে এসেছে বা শেখানো হয়েছে তাদের, সেই চিন্তা করাও হয়তো পাপ। সম্পূর্ণ ভুল চিন্তা বা শিক্ষা। লেখকের ভাবে লুকিয়ে থাকে অনেক অনুচ্চারিত শব্দ। ভালো অনুবাদক দৃশ্যমান শব্দরাশির বাইরে গিয়ে সেই মনিমুক্তোর ভাণ্ডারকেও চিরুণিতল্লাশি করেন। অনুচ্চারিত কিন্তু অনুভূত শব্দপ্রয়োগ বঙ্গানুবাদকে দেয় এক নতুন মাত্রা।
বাক্যযোগের অপটুতা বা সমন্বয় করার অক্ষমতা আরেক দুর্বলতা সব ছেলেমেয়েদেরই। যেমন,
Ram was so clever that he could comprehend Shyam’s tricks
অপটু লেখক এর অনুবাদ করবেন, রাম এত বুদ্ধিমান ছিল যে সে শ্যামের চালাকি ধরতে পেরেছিলো।
এই ‘যে’ আর ‘সে’ পুরো অনুবাদের দফারফা করেই ছাড়লো।
একটু ভালো লেখক এটাকেই লিখবেন, শ্যামের চালাকি রামের তীক্ষ্ণবুদ্ধিতে ধরা পড়ে গেল। ‘যে’ ‘সে’ এসবের খপ্পরে না পড়ে আর ‘তীক্ষ্ণ’ শব্দ আমদানি করেও কিন্তু বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল।
আমার ক্লাসে আমি ওই প্রচলিত গতের বাইরে বেরোতে চেষ্টা করি। তোমরাও যদি নিয়ম ভাঙতে চাও যুক্ত হয়ে যাও অধ্যয়নে আমার ক্লাসরুমে। বাংলা-ইংরেজির প্রেমে পড়বে কথা দিলাম। তাহলে 6295350330 তে করে নাও একখানা হোয়াটস্যাপ আর যুক্ত হয়ে যাও আমার ডেসক্রিপটিভ ক্লাসে। PSC Miscellaneous, WBCS, ক্লার্কশিপ যেকোনো ডেসক্রিপটিভ পরীক্ষার সাহায্য পাবে।
দেখা হচ্ছে পরের পর্বে।। ভালো থেকো সক্কলে।
সপ্তর্ষি ❤

