লেখা – সপ্তর্ষি নাগ
একটা বহুজাতিক সংস্থায় প্রমোশন পেয়ে বেঙ্গালুরু থেকে অরিত্র ভুবনেশ্বর এসেছে মাসদুয়েক হল। শহরের পাশেই একটা উঠতি টাউনশিপে বাংলো ধাঁচের একখানা বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে। কোম্পানিই দিয়েছে। জায়গাটা ভারি সুন্দর। আশেপাশের বাড়িগুলোতেও লোকজন তেমন থাকে না। মাঝেমাঝে সপ্তাহান্তে লোকজন এসে একটু হইহুল্লোড় করে। বিয়েশাদি করেনি ও। বাবা-মা থাকেন কলকাতাতে। মাসে একবার কলকাতা যায়। ভিড়ভাট্টা ওর তেমন পছন্দ নয়। কোম্পানি দুজন খানসামার খরচা দিলেও ওর তেমন লোকজন পছন্দ নয় বলে কাউকেই নেয় নি। একসময় রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিল। নিজের কাজ নিজের হাতেই করা পছন্দ। মাঝেসাঝে ঘরদুয়ার পরিষ্কার করতে লোক ডেকে নেয়। সময় পেলে একা একাই একটু লেখালেখি করতে পছন্দ করে। আর কাজের ব্যস্ততা তো রয়েইছে।
আজ শনিবার। তেমন কাজ নেই। তারমধ্যে আবার কালরাত থেকে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকেই ও টিভিতে খবর দেখছে । অন্যসময় তেমন টিভি দেখার নেশা নেই ওর। কিন্তু দিনেকয়েক হল একটা ঘটনা পুরো শহরকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। মাঝেমাঝেই তাই টিভিতে নজর রাখছে । আসলে শহরে পরপর খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। আর খুন ও যেমন তেমন নয়। হাতুড়ি বা সেই ধরণের কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারা হয়েছে প্রতি ক্ষেত্রেই। মাথাটা থ্যাতলা হয়ে রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে। আর অদ্ভুতভাবে প্রতি ক্ষেত্রেই চোখেদুটোকে উপড়ে নেওয়া। টিভিতে বারবার সেই মৃতদেহগুলোর ছবি ভাসছে। ফরেন্সিক এক্সপার্টরা বলছেন, এটা কোনো উন্মাদ ব্যক্তির কাজ। মানে সিরিয়াল কিলার গোছের। প্রত্যেক খুনের ধরণ একই রকমের। আর সবক্ষেত্রেই নাকি খুন হয় অন্য জায়গাতে আর তারপর মৃতদেহ ফেলে রাখা হয় কোনো নির্জন জায়গাতে। যেমন শহরলাগোয়া ছোট জঙ্গল বা নদীর তীর ধরণের। প্রায় সপ্তাহখানেকের ভেতরেই তিনখানা এরকম মৃতদেহ পাওয়া গেলেও পুলিশ কোনো কূলকিনারা করে উঠতে পারেনি এখনো। বারবার করে টিভিতে সতর্ক করা হচ্ছে অপরিচিত মানুষের থেকে দূরে থাকতে। রাতের দিকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরোনোতেও নিষেধাজ্ঞা চলছে। একে আকাশভাঙা বৃষ্টি, তার উপর আবার টিভিতে ভয়াবহ সেইসব ছবি। কেমন যেন গা শিরশির করে উঠছিল অরিত্রের।
হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠল। চমকে উঠেছিল অরিত্র। এই দুর্যোগে কে এল আবার! দরজার আই-হোল দিয়ে দেখল একটা মেকানিক গোছের লোক এসেছে। এসি মেশিনটা ইনস্টল করতে এসেছে, মনে পড়লো অরিত্রের। দরজার এপাশ থেকেই চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলো লোকটাকে। ঠিকই ধরেছে এসি মেশিন লাগাতেই এসেছে। সঙ্গে আবার যন্ত্রপাতির একখানা ব্যাগ। দিনকাল ভালো নয়, দরজা খুলেই তাই পরিচয়পত্র চাইলো ও। লোকটার চেহারাছবি ঠিক সুবিধার লাগছে না। পরিচয়পত্র অবশ্য ঠিক আছে। একবার ভাবলো আজ না করে দেয়, পরে আসতে বলে। তারপর আবার মনে হল, এইসব কাজের লোক সবসময় পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া পরশু অবধি যা গরম পড়েছিল। এসিটা লাগিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শোবার ঘরে অবশ্য এসি শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু যেখানে বসে ও কোম্পানির পেপারওয়ার্ক করে, সেখানে আরেকখানা এসি না লাগালেই চলছিল না। তার উপর আবার ভুবনেশ্বরের গরম! এত মাইনের চাকরি করেও একদম অনাড়ম্বর জীবনে তো এটাই ওর একমাত্র বিলাসিতা। যাই হোক লোকটাকে এসিটা আর কোথায় লাগাতে হবে সেটা দেখিয়ে দিল অরিত্র। লোকটা রেনকোটটা বাইরে মেলে কাজ শুরু করলো। অরিত্র লোকটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে মেপে নেয়ার চেষ্টা করছিল। তারপর আবার টিভির দিকে চোখ রাখল। সবগুলো চ্যানেলই কয়েকখানা ফুটেজ বারবার দেখাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে চলছে পুলিশের ব্যর্থতার বিচার। এক্সপার্ট প্যানেল বসেছে মানুষের বিকৃত চিন্তাধারার উপরে। ওড়িয়া ভাষা দুমাসে একেবারেই রপ্ত করতে পারেনি বলে শুধু ইংরেজি কভারেজগুলোই দেখছিল। পাশের ঘরে লোকটা কাজ করে চলেছে। অরিত্রের বারবার চোখ যাচ্ছিল ওর ব্যাগ থেকে বের করা জিনিসগুলোর দিকে। একখানা হাতুড়ি চকচক করছে। ফোনটা একবার চেক করে নিল অরিত্র। পুলিশের নম্বরটা লাস্ট ডায়ালে রেখে দিল। সাবধানের মার নেই।
শোয়ার ঘরটা বন্ধই রাখা ছিল। অরিত্র টিভিটা চালিয়ে রেখেই সেখানে ঢুকল। কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গন্ধ ঘরটাতে । মাথার পাশের টেবিল থেকে কতগুলো ছোটছোট জিনিস তুলে নিল ও।
আর ড্রয়ার থেকে আরেকটা কি বের করলো। ধীরে ধীরে দরজা বন্ধ করে ড্রয়িং রুমে ঢুকল আবার। ছোট জিনিসগুলোকে ফ্রিজের উপর বসাল। টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিল অনেকটাই। পুলিশ কমিশনার প্রেস কনফারেন্স রেখেছে।পাশের ঘরে লোকটা একমনে কাজ করে চলেছে। গুনগুন করে কি একটা সুর ও মনে হয় ভাঁজছে। অরিত্র গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল ওই ঘরে। হাতে ড্রয়ার থেকে বের করা জিনিসটা। লোকটা নিজের কাজে ব্যস্ত, বোঝেনি অরিত্র ঢুকেছে ঘরে। হঠাৎ করে ওর মাথায় হাতুড়ির আঘাত পড়ল। একবার, দুবার, বারবার। চকিতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল লোকটা। শেষ! রক্তে ভেসে গেল ঘর। অরিত্রের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি। ফ্রিজের উপর থেকে পুরো ঘটনা যেন দেখছে তিন জোড়া চোখ। আর পুলিশ কমিশনার তখন ইংরেজিতে বলছেন, পুলিশ মনে করছে এর আগে বেঙ্গালুরুতে হওয়া সিরিয়াল মার্ডারের সঙ্গে ভুবনেশ্বরের ঘটনার হুবহু মিল পাওয়া গেছে। অরিত্র তখন আঙ্গুল দিয়ে মেকানিকটার চোখ ওপড়াচ্ছে।
Khub enjoy korlam golpo ta 😊
Sir ektu sihoron jagano golpo lekha chere ektu onnorokom type er kahini likhun na.. ei golpo gulor last ta pore jeno harh him hoye Jai .. but sir jaihok apnar voice ta bes kintu..