এই কথাটাই জোশ টকস ভিডিওতে বলেছি. কিন্তু এবার লিখতে ইচ্ছে হল. সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আজকাল দেখছি সেই ছেলে মেয়েগুলোকে নিয়ে ব্যঙ্গ হচ্ছে যারা একটু বেশি নম্বর পেয়েছে. ওদের বয়স আর নিজের বয়সের তুলনা করে এইসব কটূক্তি করলে মনে হয় আপনারা সুনাগরিকের কাজ করবেন. ভাবতে পারেন ওই ষোলো বা আঠারো বছরের ছেলেমেয়েদের মাথায় আপনাদের বক্রোক্তি বা ব্যঙ্গ কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে? বেশি নম্বর পেয়ে ওরা কি কোনো দোষ করে ফেলেছে? কতটুকু ম্যাচুরিটি থাকে ওই বয়সে? আপনি যিনি ওর আনন্দ মাটি করছেন ওর নামে বাজে কথা লিখে কিসের জন্য করছেন? হাতে অনেক সময়? নাকি নিজে কিছু করতে পারেননি বলে অন্যের ভালো মুহূর্ত সহ্য হচ্ছে না? আর এই আঘাতে যদি ওদেরকোনো সর্বনাশ হয় তখন আপনারাই কিন্তু RIP, RIP করে ফেসবুক আর হোয়াটস্যাপে কুম্ভীরাশ্রু ফেলবেন. বলবেন আহা কি ভালো ছেলেটাই না ছিল. কতই না সম্ভাবনা ছিল ওর!
এবার চলে আসি আমার কথায়. যেটা বারবার আমার জোশ টকস ভিডিওতে বললাম. তাদের বলছি যারা হয়তো তেমন ভালো রেজাল্ট করোনি. বাবা মায়ের মন খারাপ, পাড়া প্রতিবেশী বেশ খুশি, তুমি এখনো জানো না সামনে কি আছে. আমি বলবো বেশ করেছো. আর কেউ বলবে না ডাক্তার হও, ইঞ্জিনিয়ার হও. আরে তোমার ভালো লাগতো ইংরেজি সাহিত্য, আর তোমাকে বলা হত স্ক্যালপেল ধরতে. তোমার ভালো লাগতো ভলতেয়ার পড়তে, তোমাকে জোড় করা হত ব্রিজ বানানো শিখতে. এবার আর কেউ চাপ দেবে না. এবার মন খুলে সেই লাইনে যেতে পারবে যেখানে কম্পিটিশন কম, কিন্তু হয়তো তোমার মন পড়ে ছিল, শুধু বাবা মা কিংবা পাশের বাড়ির রাম কাকু, রুমকি কাকিমা এদের চাপে মুখ ফুটে বলতে না. রামকাকুর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিল. কাকিমার মুখে ওকে নিয়ে ফুলঝুরি চলে কথার. একবারও সেই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছো ও কেমন আছে. মন খুলে বাঁচছে তো নাকি এখন থেকেই ক্যাম্পাসিং এর নিলামের জন্য তৈরি হচ্ছে? কত দাম ওঠে নিজের তার জন্য? তোমার আর সেসব চাপ নেই. তোমার সামনে ইঁদুর দৌঁড় নেই. নেই কারো প্রত্যাশাও. ক্রিকেট দেখো তুমি? জানো তিরাশি, বিরানব্বই বা ছিয়ানব্বই সালের বিশ্বকাপ কারা জিতেছিল. সেই দল যাদের কেউ ভাবেও নি যে তাঁরা কিছু করে দেখাতে পারে. তুমিও এখন সেই জায়গাতে. আরে সবাই যখন আজ তোমাকে ভুলে গেল একবার মনে হচ্ছে না যে তুমি আজ প্রথম আসল ‘তুমি’ কে ফিরে পেলে? এবার মন খুলে ব্যাটিং কোরো. কাউকে উত্তর দিতে হবে না. শুধু নিজের মনকে প্রশ্ন করাটা ভুলো না কোনোদিন.
আর যারা দারুণ রেজাল্ট করেছো, যাদের ছবি আজকাল পেপারে উঠছে তাদেরকে বলবো- আসল চাপ কিন্তু এবার. লোকে বলবে ডাক্তার হও, ইঞ্জিনিয়ার হও. কেউ একবারও বলবে না বাবা মানুষ হও. দেখবে সমাজের দাঁড়িপাল্লায় এখন থেকেই তোমার ওজন বাড়তে শুরু করেছে. আমি বলবো সব লাইমলাইট সরিয়ে একবার আয়নার সামনে দাঁড়াও. তোমার আজকের রেজাল্ট কোনো মায়া প্রকাশনী করেনি. পাড়ার সেই কাকিমাটাও করেনি যে দুবছর আগে তোমার বোর্ড এক্সামে কম মার্কসে এমন নাক সিঁটকেছিলো যেন উনি নিজে সারাজীবন সব পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন. ডাক্তার হতে চাও, হও. কিন্তু হলে নিজের তাগিদে হও. নাহলে জেনে রেখো দুনিয়াটা ভারি কঠিন. ডাক্তারি পাশের পর এই খবরের কাগজওয়ালারা পাশে থাকবে না কিন্তু. ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও, হও না. কিন্তু হও একমাত্র তখনই যদি রাস্তায় চলতে চলতে ব্রিজটা দেখে নিজের কৌতূহল জাগে, মনে হয় ওটার ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে. তোমার ভেতরে কি চলছে কেউ জানে না. জানতেও চায় না. কারণ সবাই তোমার মার্কসকে চেনে, জানতে চায় কিভাবে অত নম্বর পেয়েছো. একবারও জানতে চায় না তুমি মানুষটা কেমন, তোমার ইচ্ছে গুলো কি. আর তুমিই যখন পরে ওনাদের চিকিৎসা করে পয়সা নেবে ওনারাই বলবেন কি কদর্য মানসিকতা তোমার! একবারও কেউ বলবে না ওই মানসিকতা বানিয়েছিলো কারা.একবার ভেবে দেখো সবাই ওই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলে দেশ কে চালাবে, কে লিখবে ভালো ভালো বই, কে আমাদের স্বপ্ন দেখাবে? যারা দেখাতো তারাই তো ব্যস্ত থাকবে অন্যের স্বপ্নকে পূর্ণ করতে. তাই বলছি সবচেয়ে চাপ আজ তোমারই. কিন্তু সবচেয়ে গরম আগুন সবচেয়ে ভালো ইস্পাত তৈরি করে. তুমিই পারবে দুনিয়া বদলাতে. তুমিই পারবে এটা বলতে যে আমি ভালো মানুষ হয়ে বাঁচবো, 99% নম্বর নিয়ে শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে না. চলো না বদলাই দুনিয়াটাকে আর ওই পচে যাওয়া মানসিকতাকে.চলো না সেই বন্ধুটার হাত ধরি যে কম নম্বর পাওয়ার পর থেকে নিজেকে আটকে রেখেছে একটা ঘরে. তুমি যখন রসগোল্লা খাচ্ছ ও হয়তো দুদিন কিছুই খায়নি…
Sir,
Apnar lekhata khub sundar. Apni keno WBCS officer hoechn seta jodi bolen kakhno khub bhalo hoi.