সপ্তর্ষি নাগ
আজ তোমার অনেক সমর্থক। অনেকেই বলছেন, বিশ্বসেরা তুমিই। নতুন কত মরশুমি পাখি আজ রাত জাগছে তোমার জাদুদণ্ডের কয়েক ঝলক দেখতে। তুলনার তুলোধোনা করে আজ তোমার দল ফাইনালে। জানি রাস্তা এখনো অনেকটাই বাকি। এই নির্মম বিশ্বে প্রথম আর দ্বিতীয়র মধ্যে ফারাক ততটাই যতটা তথাকথিত ফুটবলবোদ্ধাদের কাছে মারাদোনার আর তোমার। দ্বিতীয় হলে সত্যি আজকের অনেক চাটুকার স্বমূর্তি ধরবেন। বলবেন, সব ঠিক আছে কিন্তু এ আর যাই হোক বিশ্বসেরা কোনোদিনই না। উঠে আসবে সেই ক্লিশে মন্তব্য, লোকটা ক্লাবের বাইরে কোনোদিনই বেরোতে পারেনি। উঠে আসবে একের পর এক কোপাতে ব্যর্থতা। উঠে আসবে ২০১৪ সালের সেই ভয়ঙ্কর রাত।
কিন্তু এবারের তুমি কোথায় যেন সত্যি অন্যরকম। পাঁচখানা গোল করা বা তিনখানা গোল করানো – এসব তো কেবল পরিসংখ্যান। যারা তোমার জন্য রাত জাগেননি তারা জানতেও পারবে না, এবার বিশ্বকাপে নিজেকে কতটা নিংড়ে দিয়েছিলে তুমি। হারের পরে ডাচ বর্বরতার বিরুদ্ধে চরিত্রবিরোধী প্রতিবাদ দেখিয়েছিলো তুমি এবার সত্যি কোনোভাবেই কাপ ছাড়তে চাও নি। লুই ফান গালকে মৃদু গালিগালাজে বুঝিয়েছিলে বিনাযুদ্ধে নাহি দিব মনোভাব। ফুটবল রেফারিং এর ইতিহাসের কালো দিন সেই ডাচ ম্যাচের পর রেফারিকে তুলোধোনা করতেও ছাড়োনি তুমি।কিন্তু এসব তো মাঠের বাইরের কথা। মেক্সিকোকে দেওয়া গোলটা আসলে তোমার হয়ে তোমার নিন্দুকদের দেওয়া একটা বিবৃতি ছিল- মেসিকে আটকাবে এমন খেলোয়াড় আজ হয়তো এই দুনিয়ায় আর নেই। কয়েক ইঞ্চির ব্যবধানে থাকা কয়েকটা পা -কে হেলায় কাটিয়ে ওছোয়ার মতো গোলির ডাইভকে হারিয়ে বলটা যখন বারপোষ্টে চুমু খেল, একটাই কথা মনে হল, এই মেসি বার্সেলোনার স্বর্ণযুগের তরুণ মেসির ও পরিমার্জিত সংস্করণ। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় গোলে তোমার প্রতিভার ঝলক দেখে বিশ্ব তোমার বন্দনায় মেতে উঠেছে। কিন্তু তোমার কঠিন সময়ে পাশে থাকা কোটি কোটি ভক্তরা জানে, নিজের সেরা দিনে এটা তোমার কাছে জলভাত। তুমি তো তাদের কাছে একটা অভ্যাস। যেমন করে সূর্য উঠবে পূব আকাশে, যেমন করে বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে, যেমন করে চাতক চেয়ে থাকবে জলের আশায়। তেমনি মেসি ও মেশিনের মতো ডিফেন্স ভাঙবেন পায়ের জাদুতে, গোল করবেন বা করাবেন। আশ্চর্য হওয়া মানুষদের দেখেই আশ্চর্য হতে হয়। আর একটু ভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে। এই মেসি তো আমাদের চেনা। হ্যাঁ, এই মেসিই।
জাদুকর, আর একটা রাত নিজেকে নিজের মতো রাখো। অনেকেই অংক কষেন তোমার সঙ্গে কার খেলা পড়ছে তার। আমি বলবো,তোমার দিনে তোমার বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ডিফেন্সকে লাগিয়ে দিলেও তুমি সেটায় ফাটল ধরাবে। তুমিই তো বিশ্বসেরা। তুলনা করা তো নশ্বরের কাজ। নিন্দা করা তো নির্বোধের কাজ। নিন্দা আর তুলনার বাইরে থাকা তো তোমার মতো অবিনশ্বরের দায়িত্ব। আবার বলছি, সেকেন্ড বয় হয়ে থাকা মেসি এই মেসি না। ক্লাবস্তুরেও পরপর পাঁচটা ম্যাচ এরকম করে চাগিয়ে থাকতে তোমাকে দেখিনি অনেকদিন। তাই বিশ্বাসে বুক বাঁধছি কোটি কোটি সমর্থক। ছোটবেলা থেকে অসুস্থতা, নিন্দা, তুলনা,দুর্ভাগ্য সবই তো জয় করেছো। এবার ফুটবলদুনিয়ার হোলি গ্রেলটাই বা অধরা থাকে কেন, জাদুকর?