সপ্তর্ষি নাগ
মানুষটার সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত আজ হঠাৎ তরতাজা হয়ে উঠলো | শিলিগুড়ি কার্নিভাল চলছে | উদ্বোধন করতে এলেন তিনি | বয়স প্রায় পঁচাশি পেরোলেও উদ্দীপনা দেখলে বুঝবার উপায় নেই | মাটিগারার হোটেলে ঢুকেই ঢকঢক করে আস্ত দুটো বিয়ার শেষ করে দিলেন কয়েক লহমায় | স্যার সম্বোধনে রাগ করেছিলেন | বলেছিলেন, মিলখাজি, বোলো বেটা | অলিম্পিকের কথা জিজ্ঞেস করতেই অভিমানী কণ্ঠে বলেছিলেন, প্রেসেন্ট কো এনজয় করো বেটা অউর খওয়াব দেখো ভবিষ্য কা | বুঝে গিয়েছিলাম ওঁনার চাপা কষ্ট আর জীবনদর্শন | সাহস করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আজকাল আর মিলখা সিং তৈরি হয় না কেন? আবার প্রশ্নবাণ গ্যালারিতে পাঠিয়ে তাঁর জবাব, তব দেশ দিল মে হোতি থি, আজকাল সির্ফ সোশ্যালমিডিয়া মে | আহা, আজও কত প্রাসঙ্গিক মিলখাজির কথা | কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গনের ড্রেসিং রুমে ঢুকে টুক করে আমার পেটে একটা টোকা দিয়ে বলেছিলেন, খেলখুদ ভি করতে হো ইয়া সির্ফ অফিসার বনকে জিন্দাগি বিতা দোগে ? হেসে বলেছিলাম, থোড়াবহুত ক্রিকেট খেলতা হু | তারস্বরে হেসে উনি বলেছিলেন, তবতো তুমনে কভি মিট্টিকি খুশবু নেহি লিয়ে হো বেটা | ওঁনার একটা ধারণা ছিল যে এদেশে একটা খেলা নিয়ে উদ্দামতা এতো বেশি যে অন্য সব খেলা ও খেলোয়াড়রা যোগ্য সম্মান পান না | উদ্বোধনী ভাষণে আধা ঘন্টায় স্টেডিয়ামের সব মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছিলেন | আশ্চর্য ব্যাপার, পুরো কথায় একবারও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলেন না মিলখাজি | রাতে অনুষ্ঠানের অন্য কাজের মধ্যে থাকায় হোটেলে যেতে পারিনি | ওঁনার ডিনার বলা ছিল | মেনু ওঁনারই কথামতো, একটা গোটা মোরগের স্যালাড | তার আগে অবিশ্যি পেগ তিনেক সিঙ্গল মল্ট ও ছিল | ওঁনার একটা কথা ছিল, স্পনসর্ড অনুষ্ঠানে গেলেও ওই জিনিসটা নিজের পয়সায় খেতেন | এবিষয়ে কোনো ভদ্রতা উনি গ্রহণ করেননি | কিছু বললে চোয়াল শক্ত হয়ে যেত তাঁর | পরদিন সকালে ইন্ডিয়ান আর্মির অস্ত্র প্রদর্শনী ছিল কমিশনারেট মাঠে | সেখানে আমার ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন, পাপা জিতনা ভি বোলে, পেহলে খেলখুদ উসকে বাদ পড়াই | তারপরে চোখ টিপে মস্করা, পড়াই না করনে সে ভি চলেগা পর খেলখুদ মত ছোড়না বেটা | দুবছরের শ্লোক কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল | কিছু পরেই মিলখাজি বেরিয়ে গেলেন | ডাকলে আবার শিলিগুড়ি আসবেন কথা দিয়েছিলেন | সেই সুযোগ আর হয় নি | কাল এক্কেবারে চলে গেলেন তিনি | উপরে রাজনীতি নেই | পক্ষপাতিত্ব নেই | শোষণ আর তোষণ নেই | যোগ্যর বঞ্চনাও নেই | ওখানে সোনা উনি জিতবেনই | কেউ হারাতে পারবে না ওঁনাকে | ভালো থাকবেন স্যার, থুড়ি মিলখাজি | আচ্ছা বলাই হোলো না, ওঁনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলেছিলেন ‘ ভাগ মিলখা ভাগ ‘ ছবিটা দেখে এদেশের মানুষের বিস্মৃতির অতল থেকে ওঁনাকে তুলে আনা | দেশকে বড্ড ভালোবাসতেন মানুষটা | দেশকে অলিম্পিকে পদক না দিতে পেরে সেই উনিশশো ষাট থেকে গত একশট্টি বছরের প্রতিটা দিন আর রাত তড়পাতেন তিনি | কাল সেই হাহাকার শেষ হল | মিলখাজি এবার শান্তিতে ঘুমোবেন | আর আমার চোখে ভেসে উঠবে পাগড়ি পরা দাড়িওয়ালা লম্বা চিরতরুণ মানুষটার ছবি আর কানে বাজবে ‘বেটা ‘ শব্দটা |
Read the latest Chapter of my novel ‘The Mission’
Honestly, sir, there is no comparison between your writing.
Thank you Alok
Sir,
Great Writing.
Thanks, Sujit.
Pore khub vlo laglo sir
thank you , Koushal
Thanks you sir…. Gaye kata diye uthlo.. Apnar lekhar tulona hoi na…
thanks bhai
Sir, apnar lekha aj ditiyo bar porlam..valo lagche porte
kano Monalisa? Ei website e to amar pray 150 er upor lekha ache